ঢাকা ০৯:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পঞ্চগড়ে গ্রামবাসীর হাতে আবারও চিতাবাঘের মৃত্যু

শহীদুল ইসলাম শহীদ, পঞ্চগড়

‘খুবই কষ্ট ও বেদনাদায়ক খবর শুনেই আজকের দিনটি শুরু হলো আমার। পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় গ্রামবাসীর হাতে একটি চিতাবাঘ মারা পড়েছে। শুক্রবার সকালে তড়েয়া ইউনিয়নের দাড়খোড় গ্রামে চিতাবাঘটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। কেউ বলছেন বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বোদা উপজেলার রহমতপুর গ্রামে গ্রামবাসী একটি চিতা বাঘকে পিটিয়ে হত্যা করে। একটি ঝোপে আশ্রয় নিয়েছিল বাঘটিকে। বিকেল থেকে সেখানে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছিল। গ্রামবাসীদের নিরাপদ দূরত্বে থাকার জন্যও বলা হয়। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘিরে রাখার পর এটি বেরিয়ে এলে স্থানীয় লোকজন ভয় পেয়ে চিতাবাঘটিকে পিটিয়ে হত্যা করে। জীবিত চিতা বাঘের দুর্লভ একটি ছবি তুলেছিলেন বন্যপ্রাণীপ্রেমী ও আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহ। একটা ঝোপে আশ্রয় নিয়েছিল বাঘটা। চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছিল উৎসুক জনতা। মরিয়া চিতা বাঘটা হুংকার দিচ্ছিল, লেজ নাচাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, যেকোনো মুহূর্তে ঝোপ থেকে লাফ দেবে। এর মধ্যেই কাছে গিয়ে কয়েকটা ছবি তোলেন সাবাহ। অবশ্য উত্তেজিত জনতার রোষ থেকে আশ্চর্য সুন্দর সেই বাঘকে বাঁচানো যায়নি।
ভারতের অংশের বন থেকে আসা চিতা বাঘদের দীর্ঘদিন থাকার মতো পরিবেশ কিংবা পরিস্থিাতি নেই এদিকে। কারণ বড় একটি প্রাণী থাকলে একে দেখা না গেলেও ছাগল-কুকুর মারা পড়ত। ভারতের অংশের সংরক্ষিত এলাকাগুলোর গ্রাস ল্যান্ডে অনেক সময় আগুন দেওয়া হয়। তখন এরা এদিকে হয়তো আসে। তবে পঞ্চগড়ে চা-বাগান তৈরি হওয়ায় এখানে ডুয়ার্সের দিক থেকে আসা চিতা বাঘদের বেশি সময় আশ্রয় নেওয়ার মতো জায়গা আছে বলে মনে করছি না। চিতা বাঘ সাধারণত আক্রান্ত হলেই মানুষকে আক্রমণ করে। মিডিয়ায় সাধারণত আসে মানুষকে আক্রমণ করায় এদের পিটিয়ে মারা হয় এমন খবর।
সুন্দরবন অঞ্চলে যেমন টাইগার রেসপন্স টিম কিংবা গারো পাহাড় অঞ্চলে এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম কাজ করে, এখানে তেমনি ল্যাপার্ড রেসপন্স টিম গঠন করা যেতে পারে, যারা সাধারণ মানুষকে চিতা বাঘ দেখলেই মেরে না ফেলার ব্যাপারে সচেতন করবেন। তেমনি লোকালয়ে চিতা বাঘ দেখা গেলে এদের সেখান থেকে নিরাপদে সরিয়ে দিতে কাজ করবে। মানুষকে সচেতন করাই একমাত্র উপায়। চিতা বাঘ দেখা গেলেই যেন বন বিভাগকে জানানো হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য বেলা, পরিবেশ আন্দোলন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে পারেন।
বেলার রাজশাহী-রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী তম্ময় শ্যানাল বছরখানেক আগে সদর উপজেলা ও তেঁতুলিয়া উপজেলায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখেছি।
আমাদের কী করা উচিত
এখন আমাদের তাহলে কী করা উচিত? কীভাবে আমরা এদের রক্ষা করব? ভারতের অনেক জায়গাতেই মানুষ-চিতা বাঘ পাশাপাশি অবস্থানের নজির আছে। ভারতের রাজস্থানের বেরা, মহারাষ্ট্রের মুম্বাই, পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্স প্রভৃতি এলাকায় মানুষের আশপাশেই প্রচুর চিতাবাঘ বাস করে। তাহলে আমাদের দেশেই কেন চিতা বাঘ দেখলেই মেরে ফেলতে হবে? তাহলে আমাদের কী করা উচিত?
চিতা বাঘের নামের সঙ্গে বাঘ থাকায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। মানুষ যখন এদের ঘিরে বড় জমায়েত করে কিংবা একে আক্রমণ করে, তখন এরাও নিজেকে বাঁচানোর তাগিদে পাল্টা আক্রমণ করে। যেকোনো প্রাণী এটাই করে। তখন মানুষ আরও ক্রুদ্ধ হয়ে এদের পিটিয়ে মেরে ফেলে। ওই এলাকায় সচেতনতা বাড়ানোই এই সমস্যার একমাত্র সমাধান দেখছি। ইদানীং এ ধরনের চিতা বাঘ মারা পড়ার কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, আমাদের অ্যাওয়ারনেস বা মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করাই একমাত্র উপায়। চিতা বাঘ দেখা গেলেই যেন বন বিভাগকে জানানো হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য বন বিভাগ, বেলা, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে পারেন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয়

মাধবদীতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে গ্রেফতার রাকিবুলের শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

পঞ্চগড়ে গ্রামবাসীর হাতে আবারও চিতাবাঘের মৃত্যু

আপডেট : ০৬:২৫:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

শহীদুল ইসলাম শহীদ, পঞ্চগড়

‘খুবই কষ্ট ও বেদনাদায়ক খবর শুনেই আজকের দিনটি শুরু হলো আমার। পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় গ্রামবাসীর হাতে একটি চিতাবাঘ মারা পড়েছে। শুক্রবার সকালে তড়েয়া ইউনিয়নের দাড়খোড় গ্রামে চিতাবাঘটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। কেউ বলছেন বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বোদা উপজেলার রহমতপুর গ্রামে গ্রামবাসী একটি চিতা বাঘকে পিটিয়ে হত্যা করে। একটি ঝোপে আশ্রয় নিয়েছিল বাঘটিকে। বিকেল থেকে সেখানে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছিল। গ্রামবাসীদের নিরাপদ দূরত্বে থাকার জন্যও বলা হয়। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘিরে রাখার পর এটি বেরিয়ে এলে স্থানীয় লোকজন ভয় পেয়ে চিতাবাঘটিকে পিটিয়ে হত্যা করে। জীবিত চিতা বাঘের দুর্লভ একটি ছবি তুলেছিলেন বন্যপ্রাণীপ্রেমী ও আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহ। একটা ঝোপে আশ্রয় নিয়েছিল বাঘটা। চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছিল উৎসুক জনতা। মরিয়া চিতা বাঘটা হুংকার দিচ্ছিল, লেজ নাচাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, যেকোনো মুহূর্তে ঝোপ থেকে লাফ দেবে। এর মধ্যেই কাছে গিয়ে কয়েকটা ছবি তোলেন সাবাহ। অবশ্য উত্তেজিত জনতার রোষ থেকে আশ্চর্য সুন্দর সেই বাঘকে বাঁচানো যায়নি।
ভারতের অংশের বন থেকে আসা চিতা বাঘদের দীর্ঘদিন থাকার মতো পরিবেশ কিংবা পরিস্থিাতি নেই এদিকে। কারণ বড় একটি প্রাণী থাকলে একে দেখা না গেলেও ছাগল-কুকুর মারা পড়ত। ভারতের অংশের সংরক্ষিত এলাকাগুলোর গ্রাস ল্যান্ডে অনেক সময় আগুন দেওয়া হয়। তখন এরা এদিকে হয়তো আসে। তবে পঞ্চগড়ে চা-বাগান তৈরি হওয়ায় এখানে ডুয়ার্সের দিক থেকে আসা চিতা বাঘদের বেশি সময় আশ্রয় নেওয়ার মতো জায়গা আছে বলে মনে করছি না। চিতা বাঘ সাধারণত আক্রান্ত হলেই মানুষকে আক্রমণ করে। মিডিয়ায় সাধারণত আসে মানুষকে আক্রমণ করায় এদের পিটিয়ে মারা হয় এমন খবর।
সুন্দরবন অঞ্চলে যেমন টাইগার রেসপন্স টিম কিংবা গারো পাহাড় অঞ্চলে এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম কাজ করে, এখানে তেমনি ল্যাপার্ড রেসপন্স টিম গঠন করা যেতে পারে, যারা সাধারণ মানুষকে চিতা বাঘ দেখলেই মেরে না ফেলার ব্যাপারে সচেতন করবেন। তেমনি লোকালয়ে চিতা বাঘ দেখা গেলে এদের সেখান থেকে নিরাপদে সরিয়ে দিতে কাজ করবে। মানুষকে সচেতন করাই একমাত্র উপায়। চিতা বাঘ দেখা গেলেই যেন বন বিভাগকে জানানো হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য বেলা, পরিবেশ আন্দোলন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে পারেন।
বেলার রাজশাহী-রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী তম্ময় শ্যানাল বছরখানেক আগে সদর উপজেলা ও তেঁতুলিয়া উপজেলায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখেছি।
আমাদের কী করা উচিত
এখন আমাদের তাহলে কী করা উচিত? কীভাবে আমরা এদের রক্ষা করব? ভারতের অনেক জায়গাতেই মানুষ-চিতা বাঘ পাশাপাশি অবস্থানের নজির আছে। ভারতের রাজস্থানের বেরা, মহারাষ্ট্রের মুম্বাই, পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্স প্রভৃতি এলাকায় মানুষের আশপাশেই প্রচুর চিতাবাঘ বাস করে। তাহলে আমাদের দেশেই কেন চিতা বাঘ দেখলেই মেরে ফেলতে হবে? তাহলে আমাদের কী করা উচিত?
চিতা বাঘের নামের সঙ্গে বাঘ থাকায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। মানুষ যখন এদের ঘিরে বড় জমায়েত করে কিংবা একে আক্রমণ করে, তখন এরাও নিজেকে বাঁচানোর তাগিদে পাল্টা আক্রমণ করে। যেকোনো প্রাণী এটাই করে। তখন মানুষ আরও ক্রুদ্ধ হয়ে এদের পিটিয়ে মেরে ফেলে। ওই এলাকায় সচেতনতা বাড়ানোই এই সমস্যার একমাত্র সমাধান দেখছি। ইদানীং এ ধরনের চিতা বাঘ মারা পড়ার কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, আমাদের অ্যাওয়ারনেস বা মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করাই একমাত্র উপায়। চিতা বাঘ দেখা গেলেই যেন বন বিভাগকে জানানো হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য বন বিভাগ, বেলা, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে পারেন।