ষ্টাফ রিপোর্টার:-
চট্টগ্রাম-১৫ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য এম এ মোতালেব বলেছেন,নির্বাচনে পরাজিত হয়ে সাবেক সাংসদ ও তাঁর স্ত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রমাগত মিথ্যাচার শুরু করেছেন। তারা নানা উস্কানিমূলক অসত্য তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে উত্তেজিত ও বিব্রত করার অপচেষ্ঠায় নেমেছেন। তারা স্থানীয় সন্ত্রাসীদের মদদ দিচ্ছেন। এ ধরণের অনেক তথ্য প্রশাসন এবং আমাদের হাতে রয়েছে। তারা দশ বছর এলাকায় নানা অত্যাচার ও জুলুম করেছেন। আমি তাদের হাতে গত দশ বছরে নির্যাতিত মানুষদের কথা দিয়েছিলাম যে কোন অবস্থায় আপনাদের পাশে থাকবো। এখানে সন্ত্রাস ও প্রতিহিংসার শিকার অনেকেই উপস্থিত আছেন। আমি তাদের আইনী সহযোগিতা দেবো, যাতে তারা মিথ্যা মামলায় হয়রানী থেকে মুক্ত হতে পারে। মাদার্শা, এওচিয়া, সোনাকানিয়া, নলুয়া, চরতী ইউনিয়নে বালু মহাল দখল বেদখল, টপ সয়েল বিক্রির মহোৎসব, কৃষককে গুলি করা, বন উজাড় করা, মানুষের বাড়ি ভিটা দখল, ইটের ভাটা দখল, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে সবকিছুই করেছেন তারা। সাবেক এমপি ও তার পরিবার অরাজকতা ও নৈরাজ্যে ছাড়া কিছুই দিতে পারেননি। কথায় কথায় মানুষের সম্মান হানি করা, নিজের আধিপত্য নিশ্চিত করে তিনি সাতকানিয়াকে আতঙ্কের জনপদে পরিণত করেছিলেন। আমরা তার ও তার পরিবারের দুর্নীতির শ্বেতপত্র খুব শিগগরই প্রকাশ করবো।আজ রোববার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় এবং চট্টগ্রাম-১৫ সংসদীয় এলাকায় পরবর্তী ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।দ্বাদশ নির্বাচনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম-১৫ আসনের জনগণের জন্য একটি নতুন দিনের সূচনা হয়েছে জানিয়ে এমএ মোতালেব বলেন, আগামী ১০০ দিনে পরবর্তী উন্নয়নমূলক কাজের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় পিছিয়ে পড়া অবকাঠামোসমূহের উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে। সাতকানিয়া-লোহাগাড়াকে শান্তির জনপদে পরিণত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি।প্রশাসনকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে কোন পক্ষপাতিত্ব বা শিথিলতা দেখানো যাবে না। আগে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।সাতকানিয়া-লোহাগাড়াকে আদর্শ বাসযোগ্য জনপদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শুরু থেকেই উদ্যোগ নিয়েছি।
নির্বাচন পরবর্তী কোনো সহিংসতা সৃস্টি যাতে না হয়, সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা ও আইনিব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যদি কেউ নির্বাচনোত্তর সহবস্থান বিনষ্ট করে বা নিজেদের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিরোধ নির্বাচনের আড়ালে মিটাতে চান, তাদের কোনো দায় আমি নিবো না। পুলিশ প্রশাসনকেও তা পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছি ও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করেছি। সাতকানিয়া-লোহাগাড়াকে মাদকমুক্ত করার লক্ষ্যে মাদক ব্যবসায়ী, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের তালিকা তৈরি করে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য সাঁড়াশি অভিযান চালানোর জন্য প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের সেতুবন্ধন গড়ে তোলার জন্য দুই উপজেলাতেই নিয়মিত উঠান বৈঠক করা হবে।
এমপি মোতালেবের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ডা.আ.ম.ম মিনহাজুর রহমান বলেন, সাবেক এমপি মানুষকে নানাভাবে ধোঁকা দিয়েছেন। নির্বাচনের সময় তিনি বলেছেন- তিনি বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী আরবিতে করেছেন বলে বলে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে- আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি করেন এমন কয়েকজন শিক্ষককে দিয়ে বইটি লিখিয়েছেন। তাদের লেখনির বিপরীতে প্রত্যেকটা ২৫ হাজার টাকা করে ইসলামি ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থ দিয়েছেন। তিনি একটি লাইনও লিখেননি। তিনি (সাবেক এমপি) ক্রেডিট নেওয়ার জন্য মানুষকে বলে বেড়াচ্ছেন বঙ্গববন্ধুর আত্মজীবনী আরবীতে তিনি লিখেছেন।
সংবাদ সম্মেলন অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এমপি মোতালেবের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ডা.আ.ম.ম মিনহাজুর রহমান, সদস্য সচিব ও সাতকানিয়া পৌরসভার মোহাম্মদ জোবায়ের, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আহমদ সাইফুদ্দিন সিদ্দিকী, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী, যুগ্ম -সম্পাদক ফয়েজ আহমদ লিটন, সাতকানিয়া উপজেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি শফিফুল ইসলাম ও সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত ছিলেন।নবনির্বাচিত এমপি আরো বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য সাঁড়াশি অভিযান চালানোর জন্য প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বালু মহাল নিয়ে সন্ত্রাসী কমকাণ্ডের লাগাম টানা হবে জানিয়ে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মোতালেব বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন ও দখলবাজ সিন্ডিকেটকে আইনের আওতায় আনা হবে। অবৈধ বালু উত্তোলন সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় যেকোনো মূল্যে বন্ধ করা হবে। স্বাস্থ্য খাতে স্বচ্ছতা আনার জন্য সরকারী-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক কঠোরভাবে মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহে সেবার মান বাড়ানো হবে। জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের সেতুবন্ধন গড়ে তোলার জন্য দুই উপজেলাতেই নিয়মিত উঠান বৈঠক করা হবে। সাবেক সংসদ সদস্যের প্রতিহিংসার শিকার সকল ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা ও চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হবে। আমাদের সমর্থক অনেক নেতাকর্মী এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আমি আমার নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করবো। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মূলোৎপাঠন করা হবে। এলাকায় মাদকমুক্ত করার লক্ষ্যে মাদক ব্যবসায়ী, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের তালিকা তৈরি করে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় ক্ষত বিক্ষত প্রধান রাস্তাসমূহ মেরামত করা হবে এবং এ উন্নয়ন কর্মকান্ড আগামী ১০০ দিনে নিশ্চিত করা হবে।