ঢাকা ০৯:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে বটবৃক্ষের ছায়া সন্তানের একমাত্র অবলম্বন

সিদরাতুল মুনতাহা

বাবা মানে হাজার বিকেল আমার ছেলে বেলা,
বাবা মানে রোজ সকালে পুতুল পুতুল খেলা,
বাবা মানে কাটছে ভালো যাচ্ছে ভালো দিন,
বাবা মানে জমিয়ে রাখা আমার অনেক ঋণ।
যে বটবৃক্ষের ছায়াতলে হাজারো প্রতিকূলতায় নিশ্চিন্তে জিরিয়ে নেয়া যায়, সেই বটবৃক্ষের আরেক নাম হলো বাবা। গাছ যেমন শত ত্যাগ স্বীকার করে নিঃস্বার্থভাবে আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে কাজ করে চলেছে, বাবা ও ঠিক তেমনই সমস্ত ত্যাগ স্বীকার করে নিঃস্বার্থভাবে আমাদের নিজস্ব ছায়াতলে যত্নে রেখেছেন, শত প্রতিকূলতায় ঢাল হয়ে আমাদের রক্ষা করে চলেছেন।

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সম্পদ হলো বাবা। যার হাত ধরে এক’পা দু’পা করে আমরা কঠিন থেকে কঠিনতম পথ অতিক্রম করতে শিখি, যিনি আমাদের ভরসা, বিশ্বাস ও নির্ভরতার একমাত্র জায়গা, যার থেকে আমরা বেঁচে থাকার শক্তি পাই, সেই বাবার প্রতি সন্তানের চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে প্রতিদিনই। তবুও ভালোবাসার প্রতিদানে পৃথিবীর সমস্ত বাবাদের জন্য রয়েছে একটি বিশেষ দিন – তা হলো প্রতিবছরের জুন মাসের তৃতীয় রবিবার। এই দিনটিকে ১৯৭২ সালে রিচার্ড নিক্সন ‘বাবা দিবস’ হিসেবে পালনের রীতি চালু করেন। যদিও এর পূর্বে ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে বাবা দিবস পালিত হয়েছিলো, তবে ১৯৭২ সাল থেকেই বিশ্বব্যাপী বাবা দিবস পালন শুরু হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর ই এই দিনটিতে বাবাদের ঘিরে নানা পরিকল্পনা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাবা-সন্তানের সুন্দর মুহূর্তের ছবি, কেক কাটা, বাবাকে উপহার দেয়া, বাবার সাথের মধুর স্মৃতি লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরা ইত্যাদি নানান আয়োজন করে সন্তানেরা।

বিশ্ব বাবা দিবস আজ। বাবা-মা হলো আল্লাহর দেয়া শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত, যাদের ছাড়া আমাদের জীবন কল্পনাও করা যায় না। আমার বাবার প্রতি চিরন্তন ভালোবাসায় প্রতিদিন ই আমার বাবা দিবস। তাই কখনো সেইভাবে বাবা দিবস কে ঘিরে আয়োজন করা হয় নি আমার বাবাকে নিয়ে। সেই যে আমার বেড়ে ওঠা, যখন দু অক্ষরের এই ‘বাবা’ শব্দটি উচ্চারণ করতে শিখেছি, যখন বাবার হাত ধরে এক পা দুই পা করে হাঁটতে শিখেছি, তখন থেকেই এখন পর্যন্ত যেখানেই যাই না কেন, প্রতিটা পদক্ষেপেই বাবার দেখানো পথ অবলম্বন করে চলেছি। আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হলেন আমার বাবা, কারণ বাবা’ই আমার প্রথম শিক্ষক এবং আমার সবচেয়ে বড় সমর্থক। চলতি পথে যতবার হোঁচট খেয়ে আত্নবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি, আবারো উঠে দাঁড়িয়ে সমস্ত কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে সাহস যুগিয়েছেন আমার বাবা। মনে পড়ে যায়, এইতো সেদিন বাবার হাত ধরে স্কুলে ভর্তি হতে গেলাম, সেই থেকে আজ পর্যন্ত জীবনের কঠিনতর সময় পারি দিতে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছে আমার বাবা। বাবার কাছেই স্বপ্ন দেখতে শিখেছি। শিখেছি সৎ উপায়ে কিভাবে স্বপ্নকে সত্যিতে রুপান্তরিত করা যায়। আজ বাবা আছে বলেই হয়তো জীবনটা কিছুটা হলেও সহজ, বাবা আছে বলেই কঠিন পদক্ষেপ নিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে হয় না, বাবা আছে বলেই স্বপ্ন বেঁচে আছে।

বাবারা যেভাবে বটবৃক্ষ হয়ে আমাদের আগলে রেখেছে, জীবনের প্রতিটা অধ্যায় পাড়ি দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে, সেইভাবে যেন আমরা সন্তানরাও আমাদের বাবাদের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে পারি, তাদের সকল আশা পূরণ করে হাসিখুশি রাখতে পারি – আজকের এই বাবা দিবসে এই প্রার্থনাই করি। আল্লাহ পৃথিবীর সকল বাবাকে সুস্থ রাখুক, ভালো রাখুক।

লেখক:
সিদরাতুল মুনতাহা
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

ট্যাগস :
জনপ্রিয়

মাধবদীতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে গ্রেফতার রাকিবুলের শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

যে বটবৃক্ষের ছায়া সন্তানের একমাত্র অবলম্বন

আপডেট : ০৮:৫৯:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুন ২০২৪

সিদরাতুল মুনতাহা

বাবা মানে হাজার বিকেল আমার ছেলে বেলা,
বাবা মানে রোজ সকালে পুতুল পুতুল খেলা,
বাবা মানে কাটছে ভালো যাচ্ছে ভালো দিন,
বাবা মানে জমিয়ে রাখা আমার অনেক ঋণ।
যে বটবৃক্ষের ছায়াতলে হাজারো প্রতিকূলতায় নিশ্চিন্তে জিরিয়ে নেয়া যায়, সেই বটবৃক্ষের আরেক নাম হলো বাবা। গাছ যেমন শত ত্যাগ স্বীকার করে নিঃস্বার্থভাবে আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে কাজ করে চলেছে, বাবা ও ঠিক তেমনই সমস্ত ত্যাগ স্বীকার করে নিঃস্বার্থভাবে আমাদের নিজস্ব ছায়াতলে যত্নে রেখেছেন, শত প্রতিকূলতায় ঢাল হয়ে আমাদের রক্ষা করে চলেছেন।

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সম্পদ হলো বাবা। যার হাত ধরে এক’পা দু’পা করে আমরা কঠিন থেকে কঠিনতম পথ অতিক্রম করতে শিখি, যিনি আমাদের ভরসা, বিশ্বাস ও নির্ভরতার একমাত্র জায়গা, যার থেকে আমরা বেঁচে থাকার শক্তি পাই, সেই বাবার প্রতি সন্তানের চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে প্রতিদিনই। তবুও ভালোবাসার প্রতিদানে পৃথিবীর সমস্ত বাবাদের জন্য রয়েছে একটি বিশেষ দিন – তা হলো প্রতিবছরের জুন মাসের তৃতীয় রবিবার। এই দিনটিকে ১৯৭২ সালে রিচার্ড নিক্সন ‘বাবা দিবস’ হিসেবে পালনের রীতি চালু করেন। যদিও এর পূর্বে ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে বাবা দিবস পালিত হয়েছিলো, তবে ১৯৭২ সাল থেকেই বিশ্বব্যাপী বাবা দিবস পালন শুরু হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর ই এই দিনটিতে বাবাদের ঘিরে নানা পরিকল্পনা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাবা-সন্তানের সুন্দর মুহূর্তের ছবি, কেক কাটা, বাবাকে উপহার দেয়া, বাবার সাথের মধুর স্মৃতি লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরা ইত্যাদি নানান আয়োজন করে সন্তানেরা।

বিশ্ব বাবা দিবস আজ। বাবা-মা হলো আল্লাহর দেয়া শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত, যাদের ছাড়া আমাদের জীবন কল্পনাও করা যায় না। আমার বাবার প্রতি চিরন্তন ভালোবাসায় প্রতিদিন ই আমার বাবা দিবস। তাই কখনো সেইভাবে বাবা দিবস কে ঘিরে আয়োজন করা হয় নি আমার বাবাকে নিয়ে। সেই যে আমার বেড়ে ওঠা, যখন দু অক্ষরের এই ‘বাবা’ শব্দটি উচ্চারণ করতে শিখেছি, যখন বাবার হাত ধরে এক পা দুই পা করে হাঁটতে শিখেছি, তখন থেকেই এখন পর্যন্ত যেখানেই যাই না কেন, প্রতিটা পদক্ষেপেই বাবার দেখানো পথ অবলম্বন করে চলেছি। আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হলেন আমার বাবা, কারণ বাবা’ই আমার প্রথম শিক্ষক এবং আমার সবচেয়ে বড় সমর্থক। চলতি পথে যতবার হোঁচট খেয়ে আত্নবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি, আবারো উঠে দাঁড়িয়ে সমস্ত কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে সাহস যুগিয়েছেন আমার বাবা। মনে পড়ে যায়, এইতো সেদিন বাবার হাত ধরে স্কুলে ভর্তি হতে গেলাম, সেই থেকে আজ পর্যন্ত জীবনের কঠিনতর সময় পারি দিতে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছে আমার বাবা। বাবার কাছেই স্বপ্ন দেখতে শিখেছি। শিখেছি সৎ উপায়ে কিভাবে স্বপ্নকে সত্যিতে রুপান্তরিত করা যায়। আজ বাবা আছে বলেই হয়তো জীবনটা কিছুটা হলেও সহজ, বাবা আছে বলেই কঠিন পদক্ষেপ নিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে হয় না, বাবা আছে বলেই স্বপ্ন বেঁচে আছে।

বাবারা যেভাবে বটবৃক্ষ হয়ে আমাদের আগলে রেখেছে, জীবনের প্রতিটা অধ্যায় পাড়ি দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে, সেইভাবে যেন আমরা সন্তানরাও আমাদের বাবাদের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে পারি, তাদের সকল আশা পূরণ করে হাসিখুশি রাখতে পারি – আজকের এই বাবা দিবসে এই প্রার্থনাই করি। আল্লাহ পৃথিবীর সকল বাবাকে সুস্থ রাখুক, ভালো রাখুক।

লেখক:
সিদরাতুল মুনতাহা
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা