এম এ সাত্তার, কক্সবাজার: প্রতিদিন রাত পোহালেই দেখা যায় মরহুম একেএম মোজাম্মেল হকের বাড়ি ‘হকশণ’ এ দেখা যায় মানুষের জটলা। তাদের কেউ নিজের সমস্যা, কেউ অন্যের সমস্যা বলতে এসেছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত একে একে নিজের মত করে ভালো-মন্দ সবই খুব কাছ থেকে মন খুলে বলছেন তারা। তাদের কথা গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনেছেননা গরিক কমিটির ব্যানারে কক্সবাজার পৌরসভার স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ। কথা শেষে সবাই হাসিমুখে ফিরছেন।
এলাকার মানুষের আলাপচারিতায় একজন সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের কথা উঠলে সর্বাগ্রে যে মানুষটির নাম উঠে আসে তিনি হচ্ছেন মাসেদুল হক রাশেদ। পৌরশহরের প্রতিটি মহল্লার মানুষ তাকে ‘রাশেদ ভাই’ নামে চেনেন। মেয়র হয়ে পৌরশহরের রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি সরবরাহ, পানি নিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের মাধ্যমে গর্ব নকরার মত একটি পৌরসভা উপহার দিতে চান তিনি।
মাসেদুল হক রাশেদের জন্ম পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড নতুন বাহারছরা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। বাবা একেএম মোজাম্মেল হক তৃণমূল পর্যায়ের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে নেতৃত্ব দেয়া ও এলাকার মেহনতি-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো দেখতেন তিনি। বাবার কাছ থেকেই অন্যের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা পেয়েছেন তিনি।
আগামী পৌরসভা নির্বাচনের জন্য একজন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে পৌরসভার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ছুটে চলেছেন এ সমাজসেবক। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও হিতাকাঙ্খিদের নিয়ে ভোটের জন্য দোয়া ও সমর্থন চাইছেন। তরুণ প্রজন্মের নতুন ভোটারসহ সাধারণ মানুষের থেকে পেয়েছেন ব্যাপক সাড়া।
আসন্ন নির্বাচনে পৌরসভার তরুণ প্রজন্মসহ সচেতনমহলও কক্সবাজার পৌর শহরের রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, বিদ্যুৎ, পানি ও স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি হিসেবে রাশেদকে নিয়েই ভাবছেন। নির্বাচনী আলোচনায় এগিয়ে তিনি।
অন্যদিকে সাধারণ নাগরিকদের অভিযোগ, বিগত কয়েকটি পৌর নির্বাচনের আগে অনেক সাবেক ও বর্তমান মেয়রের দেওয়া উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। পৌরশহরের বিভিন্ন রাস্তা কয়েকবছর ধরে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে যেগুলো মেরামত করে দেবেন বলে বলে এখনো তা দেননি। রাস্তার পাশে পড়ে রয়েছে নোংরা-আবর্জনার স্তুপ, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এছাড়া পৌরসভার বিদ্যুৎ সুবিধা, সুপেয় পানি ও বর্ষাকালে শহরে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অনেকটাই হযবরল। কক্সবাজার পৌরসভা ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভা কাগজের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
নতুন বাহারছড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দিন (সাবেক কাউন্সিলর) বলেন, চেয়ারম্যান পুত্র রাশেদ একজন সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। কক্সবাজারের সকল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার খুব ভালো সম্পর্ক এবং তিনি ব্যবসায়ীদের ভালোমন্দ বিষয়ে সবসময় খোঁজ রাখেন। তার মতো একজন সৎ ও যোগ্য মানুষ আগামীতে কক্সবাজার পৌরমেয়র হলে ব্যবসায়ীরা নিরাপদে ব্যবসা করতে পারবেন। সেইসঙ্গে পৌরশহরের মার্কেটগুলোতে চুরি-ডাকাতির মতো অনাকাঙ্খিত ঘটনামুক্ত হবে এবং পৌরবাসী অনেক সুবিধা ভোগ করবেন।’
‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্রীড়াঙ্গন ও সাংস্কৃতিক জগতে মাসেদুল হকের রয়েছে অবাধ বিচরণ। অর্থের অভাবে যেনো তার এলাকার কোনো দরিদ্র ছেলেমেয়ের পড়ালেখা বন্ধ না হয়, সেদিকে রাশেদের সুনজর খুব তীক্ষ্ম। এ ধরণের একজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি আগামীতে জনপ্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেলে এলাকায় শিক্ষা ও সংস্কৃতি জগতে আমূল পরিবর্তন ঘটবে’। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী রাশেদ সম্পর্কে কথাগুলো বলেন, পৌরশহরের স্থায়ী বাসিন্দা পর্যটন ব্যবসায়ী চৌধুরী আব্দুল হামিদ।
কক্সবাজার ফিশারি ঘাট এলাকার খান কর্পোরেশনের সত্ত্বাধিকারী ছৈয়দুর রহমান খান বলেন, মেয়র প্রার্থী রাশেদ ভাই একজন সৎ , উদার মনের মিতব্যয়ী মানুষ। তিনি শত ব্যস্ততার মাঝেও গরিব ও মেহনতি মানুষের পাশে দাঁড়ান। আগামীতে মেয়রের চেয়ারে বসার সুযোগ পেলে তিনি পৌরবাসীর জন্য সবধরণের উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারবেন।’
দলের মনোনয়ন না পেয়ে নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন কক্সবাজার পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান,বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম মোজাম্মেল হকের বড় ছেলে মাসেদুল হক রাশেদ। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ নানা পদে দায়িত্বপালন করেন। তার ভাইদের মধ্যে শহিদুল হক সোহেল জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, শাহীনুল হক মার্শাল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং কায়সারুল হক জুয়েল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। বোন তাহমিনা চৌধুরী লুনা জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি।
একান্ত সাক্ষাতকালে চেয়ারম্যান পুত্র মাসেদুল হক বলেন, এলাকার সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা আমি আমার প্রয়াত রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক বাবার নিকট থেকেই পেয়েছি। আর বাবাও চেয়েছিলেন, আমি যেনো সারাজীবন মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করি। বাবার সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতেই আগামী পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছি। এতে আমি আমার এলাকার সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনের সময় উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েও টাকার বিনিময়ে ভোটারদের মূল্যবান আমানত যাতে কেউ নষ্ট করতে না পারে, আমি সেই পরিবেশ তৈরি করতে চাই। আর মেয়র হয়ে পৌরশহরের রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি সরবরাহ, পানি নিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন করে উন্নতমানের পরিবেশবান্ধব নাগরিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে গর্ব করার মত একটি পৌরসভা উপহার দিতে চাই।
তথ্যমতে,২০১৮ সালের ২৫ জুলাই কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গতবারের নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। আগামী ১২ জুন কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোটগ্রহণ চলবে। কক্সবাজার পৌরসভার ১২ ওয়ার্ডের বর্তমান ভোটার ৯৪ হাজার ৮০২ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৯ হাজার ৮৭৯ ও নারী ভোটার ৪৪ হাজার ৯২৩ জন।