এম এ সাত্তার, কক্সবাজার:- কক্সবাজারে বাঁকখালী নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতেছে বালু খেকোরা। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানের ছড়া ও খাল থেকেও চলছে বালু উত্তোলনের প্রতিযোগিতা।এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে নদীপাড়ে তীব্র ভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ভাঙন সৃষ্ট হলে ভেস্তে যেতে পারে সরকারের নেয়া জিও ব্যাগ প্রকল্প। এ ছাড়া হুমকিতে পড়তে পারে নদী রক্ষা বাঁধও।এসব বালু মোটা অংকে জমি ভরাট,ডাম্পার ও ট্রাকে ভরে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে ভূমিদস্যু সিন্ডেকেট।
বাঁকখালী নদী থেকে এভাবে অবৈধভাবে দিনের পর দিন বালু উত্তোলনর অপকর্ম অব্যাহত থাকলেও পরিবেশ অধিদফতর কিংবা ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন কার্যকরী আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।অপরদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বাংলা বাজার ব্রিজ, রাবার ড্যাম, এসএমপাড়া নদী রক্ষা বাঁধ, ছনখোলা খেয়াঘাট,গোদারপাড়া নদীরক্ষা বাঁধ, মাঝের ঘাট ব্রিজ,সদ্য নির্মাণাধীন কস্তুরা ঘাট ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
এই অবস্থায় সরকারি কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একাধিক স্থাপনার স্থায়িত্ব ধরে রাখতে বাঁকখালী নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন ও মাটি কাটা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
উপজেলার পিএমখালী, ঝিলংজা ইউনিয়নের মোক্তারকূল,মোহরিপাড়া, ছনখোলা খেয়াঘাট,গোদারপাড়া, বাংলাবাজার ব্রিজ, রাবার ড্যাম, বড়ুয়া পাড়াসহ একাধিক পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টা এই বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। এ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র। নদীর পয়েন্টে পয়েন্টে শক্তিশালী ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে প্রকাশ্য বালু উত্তোলন হলেও রহস্যজনকভাবে নীরব রয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
স্থানীয়রা জানান, এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বর্ষাকালে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এতে প্রতিবছর বিলীন হয় ফসলি জমি, বসতভিটা, ঘরবাড়ি, মসজিদ-মন্দির, সড়ক সহ নানা স্থাপনা। সে সময় ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোটি কোটি টাকার ব্যয়ে জিও ব্যাগ ফেললেও ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে বালু উত্তোলনের কারণে হুমকিতে রয়েছে নদী রক্ষা বাঁধও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে সরকারি দলের প্রভাব বিস্তার করে একাধিক চক্র বাঁকখালী নদীর একাধিক পয়েন্টে শক্তিশালী ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে।বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত বাংলাবাজার সেতুর পিলারের একেবারে নিচে একাধিক মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের অপকর্ম করে যাচ্ছে স্থানীয় একটি বালুখেকো চক্র।যেকারনে সেতুটির বড়ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন। বাংলা বাজার এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা শিহাব উদ্দিন, ঝিলংজা মুহুরিপাড়া এলাকার আমিন মেম্বারের ভাই মুবিন, এসএমপাড়া মসজিদ সংলগ্ন বড় পুকুরের পশ্চিম পাশে বাড়ি মৃত অচিউল্লার পুত্র গিয়াস উদ্দিন,গোদার পাড়া এলাকায় কামরুল ইসলাম ও নুরুল কবির এ অবৈধ বালু উত্তোলন কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাবাজার সেতু পয়েন্টে ছাড়াও বর্তমানে বালু উত্তোলন চলছে একাধিক পয়েন্ট থেকে। বিশেষ করে নুনিয়ারছড়ার ফিশারিঘাট থেকে শুরু হয়ে রামুর শিকড়ঘাটা ব্রীজ পর্যন্ত এলাকাজুড়ে চলছে বালু উত্তোলন। তবে দিনরাত বালু উত্তোলন রয়েছে দরগাহ পাড়া, খরুলিয়ারটেক, বাংলাবাজার ব্রিজ ও তার আশপাশের, রাবার ড্যাম, বড়ুয়া পাড়া সিতাখলা, এসএমপাড়া নদী রক্ষা বাঁধ, ছনখোলা খেয়াঘাট,গোদারপাড়া নদীরক্ষা বাঁধ, মাঝের ঘাট ব্রিজ,সদ্য নির্মাণাধীন কস্তুরা ঘাট ব্রিজ সংলগ্ন একাধিক পয়েন্টে।পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বনবিভাগের অধীন বিভিন্ন ছড়াখালে নিষিদ্ধ ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু উত্তোলন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চান্দের পাড়া এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের জানান, এ এলাকায় রাবার ড্যাম স্থাপনের পর থেকে কয়েক বছর খুবই সুন্দর ভাবে চাষাবাদ হতো। বিগত কয়েক বছর ধরে রাবার ড্যাম অকেজো হওয়ার কারণে চাষবাস তো হচ্ছে না।এমনকি বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষের ওপর জীবিকা নির্বাহকারি প্রান্তিক চাষীদের দূর্গতির সীমা নেই।কিছু কতিপয় লোকজন সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ড্যামের সন্নিকটে বালি উত্তোলন করছে এবং মাটি কেটে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে যা ড্যামটির জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এলাকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাবার ড্যামটি অকেজো হওয়ার পিছনে তার আশপাশ থেকে অপরিকল্পিতভাবে মাটি বালু উত্তোলনকেই দায়ী করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার তানজির সাইফ আহাম্মদ বলেন, তার অফিস থেকে কাউকে বালি উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়নি, বরং বিশেষ প্রয়োজনে বালি উত্তলনের অনুমতি দেয় ডিসি অফিস।কয়েকটি কোম্পানিকে ডিসি অফিস থেকে অনুমতি দিয়েছে বলে জানেন। আর অবৈধ বালি উত্তোলন কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব ইউএনও অফিসের। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ইউএনকে অবহিত করবেন বলে জানান তিনি।