শতবর্ষ পূর্ণ করেছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি)। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানী বেইজিং-এর ঐতিহাসিক তিয়েন আনমেন চত্বরে (স্কয়্যার) সামরিক কুচকাওয়াজ, বিমান বাহিনীর মহড়া এবং দেশাত্মবোধক ও সাম্যবাদী সমবেত সঙ্গীতের মাধ্যমে জাঁক-জমকের সঙ্গে পার্টির শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে দেশটি।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মাও-সে তুং-এর পর যাকে সিসিপির সবচেয়ে জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বিশেষ এই দিনটি উপলক্ষ্যে তিয়েন আনমেনে ভাষণ দিয়েছেন। তার বক্তব্য শুনতে চত্বরটিতে জড়ো হয়েছিলেন প্রায় ৭০ হাজার মানুষ।
ভাষণে চীনের প্রতি বৈরীভাবাপন্ন দেশসমূহের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শি জিনপিং। তিনি বলেছেন, ‘চীনের অগ্রগতি অনেকের কাছেই ঈর্ষার কারণ। এ কারণে তারা সবসময় চীনকে দাবিয়ে রাখতে চায়, পরাধীন বানাতে চায়, চীনের ক্ষতি করতে চায়।’
‘আজ আমি ঐতিহাসিক এই চত্বরে দাঁড়িয়ে বলছি, কেউ যদি চীনের কোনো প্রকার ক্ষতি করার কোনো চেষ্টা করে, তাহলে চীনের ১৪০ কোটি মানুষ তাদের মাথা ইস্পাতের মহাপ্রাচীরে ঠুকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবে।’
এ সময় তিয়েন আনমেনে উপস্থিত জনতা ব্যাপক করতালির মাধ্যমে তার এ বক্তব্যকে স্বাগত জানায়। ‘একটি পরিমিত সমৃদ্ধ সমাজ’ গড়ে তোলার মাধ্যমে চীন তার শতবর্ষী লক্ষ্য অর্জন করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ভাষণে শি জিনপিং চীনের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করা, তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং হংকংয়ে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর তা সাফল্যের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণসহ মহামারি পরিস্থিতিতে দেশটির অর্থনীতির চাকা সচল রাখাতে সম্মুখ থেকে নেতৃত্ব দেওয়ায় চীনা কমিউনিস্ট পার্টিতে অবস্থান অনেক দৃঢ় হয়েছে জিনপিংয়ের।
তবে হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থিদের দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার, জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুসলিমদের নিপীড়ন তাইওয়ানকে চীনের দখলে আনতে চীন-তাইওয়ান সীমান্ত এলাকায় সামরিক অভিযান চালানোর জেরে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বেশ সমালোচনাও আছে শি জিনপিং-এর।
এছাড়া বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির জন্যও চীনকে দায়ী করে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বেশ কিছু দেশ। তাদের অভিযোগ, সার্স-কোভ-২ বা নভেল করোনাভাইরাস চীনের গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং গবেষণাগারের কর্মচারীদের অসাবধানতাজনিত কারণে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ইতোমধ্যে এই অভিযোগ ‘ল্যাব তত্ত্ব’ নামে স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে চীন অবশ্য বরাবরই এটি অস্বীকার করে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রসর ও শক্তিশালী অর্থনীতির ১৭ টি দেশের ওপর সম্প্রতি এক জরিপ চালিয়েছে। জরিপে শি জিনপিংকে ‘নেতিবাচক কিন্তু আত্মবিশ্বাসী’ হিসেবে উল্লেখ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বৃহস্পতিবার তিয়েন আনমেন চত্বরে দেওয়া ভাষণে শি জিনপিং বলেন, ‘চীন এক নতুন বিশ্বের পথে হাঁটছে। চীনের জনগণ কেবল পুরনো পৃথিবী ভাঙতেই দক্ষ নয়, বরং তারা একটি নতুন পৃথিবী গড়ে তুলতেও সক্ষম। একমাত্র সমাজতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি সম্ভব এবং একমাত্র সমাজতন্ত্রই চীনকে বাঁচাতে পারে।’
একশ বছর আগে ১৯২১ সালের ১ জুলাই চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ এক গৃহযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে তারা চীনের ক্ষমতায় আসে। তারপর থেকে ৭২ বছর ধরে দলটি চীন শাসন করে আসছে।
প্রথমে কৃষক ও শ্রমিকদের নিয়ে গঠিত হলেও পরবর্তীতে চীনের ক্ষমতাসীন এ দলটি ‘চীনা ধরনের সমাজতন্ত্র’ শ্লোগানের আলোকে বাজার অর্থনীতি ও এর উদ্যোক্তা সংস্কৃতিকে বরণ করে নেয়, কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের প্রবর্তিত পার্টির কর্তৃত্ববাদী শাসনের মডেল ধরে রাখে।
২০২০ সালে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টিতে ২৪ লাখ ৩০ হাজার নতুন সদস্য যুক্ত হন। ২০১৩ সালে শি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে এ বছরই সবচেয়ে বেশি লোক দলটিতে যোগ দিয়েছেন। এখন দলটির সদস্য সংখ্যা নয় কোটি ৫১ লাখ ৫০ হাজার বলে বুধবার প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে।
সূত্র : রয়টার্স