এম এ সাত্তার, কক্সবাজারঃ
কক্সবাজারের সরকারি বেসরকারি ব্যাংক গুলোতে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে পৌরসভার লালদীঘির দক্ষিণ পাড়স্থ ইডেনগার্ডে অবস্থিত সোনালী ব্যাংক শাখায় সেবার নামে চলছে গ্রাহক হয়রানি।প্রথম দিকে পাসপোর্ট ফি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে জমা দেয়া যেত।একটি ব্যাংকের ওপর চাপ,দুর্ভোগ, হয়রানি এবং গ্রাহকের সুযোগ- সুবিধার্থে প্রথমত বেসরকারি পাঁচটি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর।অতঃপর ২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে পাসপোর্টের টাকা জমা নেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়।
পর্যায়ক্রমে যেকোন ব্যাংকেই পাসপোর্টের ফি জমা দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় সরকার। এখন সব ব্যাংকে পাসপোর্টের টাকা জমা দেয়ার সুযোগ থাকলেও নানা অজুহাতে এই সেবা দিতে অনীহা দেখানো হচ্ছে ব্যাংকগুলো। ফলে পাসপোর্ট করতে গিয়ে সেবাগ্রহীতাদের নানা ভোগান্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন সংকট। এতে করে গ্রাহকদের পাসপোর্ট পাওয়ার প্রতীক্ষা দীর্ঘতর হচ্ছে।
এদিক ওদিক পথচারি করছিলেন আকিবুল ইসলাম।কি সমস্যা জানতে চাইলে জানালেন, আশপাশের কোনো ব্যাংকে পাসর্পোটের ফি জমা নিচ্ছে না। এক ব্যাংক বলছে সার্ভারে সমস্যা, আরেক ব্যাংক বলছে সময় লাগবে,ফরম রেখে যেতে। অনেক দূর থেকে এসেছি থাকা, খাওয়ার টাকা সাথে নেই।ইডেনগার্ডেন (লালদীঘির পাড়) সোনালী ব্যাংকের সামনে ৭ মার্চ মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে পাসপোর্ট করতে আসা আকিবুল ইসলাম এমন ভোগান্তির কথা বলেন।
আরেক পাসপোর্ট গ্রাহক লতিফা আক্তার (ছদ্দনাম) এর অভিযোগ, সাড়ে বারোটায় ব্যাংকে পাসপোর্টের ফি জমা দিতে গেলে সোনালী ব্যাংকের ই-পাসপোর্টের টাকা জমা গ্রহন কাজে নিয়োজিত মহিলা জানায় সার্ভার বন্ধ হয়ে গেছে, কালকে যেতে। অথচ বাইরে থেকে দালালের মাধ্যমে আবেদন করলে, নিমিষেই ব্যাংকে ফি জমা নিচ্ছে। আমি একজন মহিলা, তাছাড়া এসেছি চকরিয়া থেকে।খাওয়ার সমস্যা না থাকলেও হোটেলে থাকা খুবই রিস্কি মনে হয়।
পাসপোর্টের জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দিতে এমন ভোগান্তির কথা জানালেন আরও অসংখ্য মানুষ।
পাসপোর্ট করতে আসা অজিত হিমো বলেন, সোনালী ব্যাংকে ফি জমা দেয়ার জন্য গেলে জানানো হয়, সার্ভারে সমস্যার কারণেই আপাতত স্থগিত রয়েছে টাকা জমা নেয়া। বাস্তবে সার্ভারে কোনো সমস্যা নয়, একটু সময় লাগে বলেই এ সেবা দেয়া হচ্ছে না। ব্যাংকের কর্মচারী- কর্মকর্তারা গ্রাহকদের কিছুই মনে করে না। তাদের মর্জির ওপর পাচ্ছে গ্রহক সেবা।কে কোন কাজে ব্যাংকে আসল না আসল এতে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। কারণ মাস শেষে বেতন ভাতা ঠিকই পেয়ে যাচ্ছে।
লালদীঘির পাড় জিয়া কমপ্লেক্সে অবস্থিত উত্তরা ব্যাংক শাখার অভিজ্ঞতা জানালেন করিম চৌধুরী। তিনি বলেন,৮ মার্চ বুধবার ওই ব্যাংকে পাসপোর্টের ফি জমা দিতে গেলে নেয়া হয়নি। তখন ব্যাংকে কোন ভিড়ও নেই। সার্ভার কাজ করছে না এমন সস্তা অজুহাতে ‘না’ করে দেয়া হয়।পরে বিষয়টি ম্যানেজারকে অবগত করলে,ওই ব্যাংকের অন্য এক অফিসারকে কাজটি করে দেয়ার জন্য বলে দেয়। তখন সাথে সাথে পাসপোর্ট ফি জমা দেয়ার কাগজপত্র তৈরি করে দেন নির্দেশ পাওয়া অফিসার। এভাবে চলছে ব্যাংকসেবা।যে বা যারা জোর করে কাজ আদায় করে নিতে জানে তারা সফল।
একই অভিযোগ মামুনুর রশিদের। তিনি বলেন, ‘ফি জমা দেয়ার জন্য সোনালী ব্যাংকে গেলে তারা জানায় জমা নেয়া যাবে না।পাসপোর্ট অফিসে দালাল ধরে টাকা জমা দিয়েছি।’
জানা গেছে, প্রথম দিকে পাসপোর্টের ফি শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে জমা দেয়া যেত।
এরপর বেসরকারি পাঁচটি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর।ব্যাংকগুলো হলো প্রিমিয়ার, ঢাকা, ব্যাংক এশিয়া, ওয়ান ও ট্রাস্ট ব্যাংক। উল্লেখ্য ব্যাংকগুলো ২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মাস থেকে টাকা জমা নেয়া শুরু করেন। এছাড়া অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইলের মাধ্যমেও পাসপোর্টের ফি এসব ব্যাংকে পরিশোধ করা যায়।
সরকার গ্রাহক সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করতে বেসরকারি পাঁচটি ব্যাংককে সংযুক্ত করলেও পাসপোর্ট গ্রাহকের চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে।যেকারণে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে ট্রেজারি কার্যক্রম চালু করে সরকার।এ অবস্থায় দেশের যে কোনো ব্যাংকের যেকোন শাখায় ট্রেজারি চালান, সরকারি চালান, ব্যাংক ড্রাফট ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা জমা দেয়া যাচ্ছে।বর্তমানে শুধু ব্যাংকের শাখা নয়, এজেন্ট ব্যাংকিংয়েও এই ফি চালু করা হয়েছে।
গ্রাহক হয়রানির বিষয়ে কক্সবাজার সোনালী ব্যাংক শাখার এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার তারেক আজম চৌধুরীর সাক্ষাৎ পূর্বক অভিযোগ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মার্চ ৭,৮,১১ তারিখ ১২ টা থেকে ২টার সময়ে ব্যাংকে তাঁর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। পরবর্তিতে তাঁর সাক্ষাৎ পেলে নিউজে তাঁর বক্তব্য সংযুক্ত করা হবে।