ঝালকাঠি-১ আসনে (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) নৌকার প্রার্থী মুহম্মদ শাহজাহান ওমরের পক্ষে নির্বাচনে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ। তার বিপরীতের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুজ্জামানের পক্ষে দলের নেতা-কর্মীরা কাজ করবেন। এ বিষয়ে গত সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে দলের সাধারণ সভায় আলোচনা করে রেজল্যুশনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেতা-কর্মীরা।
উপজেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির অধিকাংশ সদস্য ওই রেজল্যুশনের পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন। সাধারণ সভার রেজল্যুশনে উল্লেখ করা হয়, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর (বীর উত্তম) এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা-কর্মী এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেননি। তিনি বিএনপিতে থাকালীন তার নিজস্ব ভবনে বিএনপির যে অফিস করা হয়েছিল, সেই অফিসটিকেই এখন তার নির্বাচনী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া দেশের স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের সন্তানদের নিয়ে তিনি গণসংযোগ করেছেন বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ।
উপস্থিত নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির জনসমর্থন নিয়ে শাহজাহান ওমর সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। সে সময় তার দ্বারা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হন। তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা-কর্মীদের কাজে লাগাতে চান না। তাই দলীয় সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুজ্জামানের পক্ষে দলের সব নেতা-কর্মী কাজ করবেন।
এ বিষয়ে রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট খায়রুল আলম সরফরাজ বলেন, ‘ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় এসে দলের সভাপতি-সম্পাদকসহ কোনো নেতাদের ডাকেননি। তিনি শুরু থেকে দলীয় কার্যালয়ে না এসে নিজের নির্বাচনী কার্যালয়ে বসে বিএনপির সমর্থক ও মুক্তিযুদ্ধের সময়ে রাজাপুরের কিছু বিতর্কিত মানুষ নিয়ে কাজ করছেন। তাই আমরা সাধারণ সভায় রেজল্যুশন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জামানের পক্ষে সব নেতা-কর্মী কাজ করবে। বিষয়টি আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান ওমরের বক্তব্য জানতে চেয়ে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে তার নির্বাচন পরিচালনার সমন্বয়ক ব্যারিস্টার মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের রেজল্যুশন দলের গঠনতন্ত্রবিরোধী। কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগের দলীয় সাধারণ সভায় এরূপ সিদ্ধান্ত হওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ।’
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনিরের পাশে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুজ্জামানকে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় দেখা যায়। এ সময় তাদের পাশে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ এইচ এম খায়রুল আলম সরফরাজসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির বলেন, ‘শুধু সৌজন্য সাক্ষাৎ করার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জামান আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তবে আমাদের জেলা কমিটির পক্ষ থেকে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশনা থাকবে।’
কাঁঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বিমল সমাদ্দার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে নামতে পারিনি। শাহজাহান ওমর এর আগে কাঁঠালিয়ায় এসে সভা করলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সেখানে কেউই যায়নি। তখন তাকে সাংগঠনিকভাবে জানিয়েছিলাম, আমরা তার সঙ্গে কাজ করতে চাচ্ছি। কিন্তু তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের না ডাকলে আমরা কীভাবে যাব?’
স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি, সম্পাদকসহ সব নেতা আমার সঙ্গে আছেন। তারা আমার ঈগল প্রতীকের পক্ষে নির্বাচন করতে একমত হয়েছেন।’